একুশ শতকের বোহেমিয়ান রক্তক্ষয়ী জুলাই’২৪ গণ-অভ্যুত্থান

বিশ্ব ইতিহাসে ছাত্র আন্দোলনের নজির বহু, কিন্তু আমাদের দেশে “রক্তাক্ত জুলাই” যেন নতুন অধ্যায় রচনা করল। এক দিকে তরুণদের উদ্দীপ্ত সংগ্রাম, অন্য দিকে স্বৈরশাসকের তাণ্ডব—এর মধ্য দিয়েই আমরা দেখলাম একটি মর্মান্তিক অধ্যায়। এমন নৃশংসতার উদাহরণ কমই পাওয়া যাবে, যেখানে স্বৈরতন্ত্র রুখতে ছাত্রদের সাহসিকতা, প্রতিবাদ, এবং ত্যাগ পরিণত হয়েছে নতুন এক বিপ্লবের রূপকে।

 

বিপ্লব তো বিপ্লবই, কখনো সে ড্রামা ক্লাবের ইভেন্ট, কখনো সে রেডিও মাইক্রোফোনের আওয়াজ। আর যখন সে ছুটে আসে ছাত্রদের বুকে, তখন সে হয়ে ওঠে ‘গণবিপ্লব’। কিন্তু কীভাবে? সহজ! এক ঢিলে দুই পাখি, মানে, একটা রাস্তায় ঝাঁক বেঁধে বেরিয়ে পড়ে, আর সব ঝামেলা এক ঝটকায় শেষ! ভাবছেন, নাটকীয়তাই সব? মোটেও না, কারণ শাসক মহাশয়রা তাদের ‘ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট’ হয়ে এই নাটককেও দেয় নতুন রূপ।

 

সাম্প্রতিক আন্দোলন শুরু হয়েছিল শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির জন্য, কিন্তু তা ধীরে ধীরে রূপ নেয় বৃহত্তর আন্দোলনে। সরকারি লাঠিচার্জ, গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা—সব কিছুই যেন এই আন্দোলনের অগ্নিকে আরও উস্কে দেয়। মজার ব্যাপার হল, যে সরকার সব কিছু নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দাবি করে, তাদেরই যেন নিজেদের বিরুদ্ধে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে তুলতে হয়। হাসিনা সরকারের বৈষম্যপূর্ণ নীতি, লাগামহীন দ্রব্যমূল্য, বেকারত্ব আর ঘৃণার রাজনীতি যখন মানুষকে নাভিশ্বাস তুলে, তখন প্রতিবাদ আসাটা অস্বাভাবিক নয়।

 

বিপ্লব মানে সামগ্রিক পরিবর্তন, যেন পুরনো কাঠামো উচ্ছেদ করে নতুন কিছু প্রতিষ্ঠা করা। পক্ষান্তরে, আন্দোলন হল প্রতিরোধের ধারাবাহিক প্রচেষ্টা। এক সময়ে সহনশীলতা ও প্রতিবাদের সমাপ্তি ঘটে আর তা রূপ নেয় শক্তির লড়াইয়ে—এটাই বিপ্লবের সূচনা। ‘রক্তাক্ত জুলাই’ও এমনই একটি বিপ্লবী অধ্যায়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

 

তাই যখন বাংলাদেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলো, দেশের সরকারি চ্যানেলগুলো সেটা কাভার করতে অজুহাত দিয়ে অযাচিত বিজ্ঞাপন দিয়ে দেখাল। বিদেশি সংস্থা থেকে পাওয়া আধা ব্যর্থ ‘নির্বাচনী পোস্টার’ পড়ানোর মতো নতুন-নতুন স্কিম নিয়ে এলো। আমাদের নেতারা তখনও প্রমাণ করে চলেছেন, ‘রক্ত দিয়ে বিপ্লব হতে হবে’। ভালোই, জানি সবাই বিরক্ত হবে, তবুও বলি: “ফরাসি বিপ্লবের পর দুইশ বছর পার, আর বাংলাদেশকে এখনও সিস্টেম ছাড়ে না।”

 

১৯৫২ থেকে ২০২৪, ছাত্র আন্দোলন ঠিকই ছিল, শুধু ‘গান্ধীগিরি’ না, কখনো কখনো চায়ের কাপে রাজা-উজির মারাও। হঠাৎ যখন পুলিশ ব্রুটালিটি আর চাটুকারিতার মোটা চাদরে ঢাকল দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়, তখনই ‘স্বৈরাচার বধ’ আর ‘গণতন্ত্র ফেরানোর’ দাবি নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো তারা, আর বুলেট ছুটল রাস্তায়।

এটা নতুন কিছু নয়; ফরাসি বিপ্লবের সুর উড়েছিল “স্বাধীনতা, সাম্য, ভ্রাতৃত্বের” স্লোগানে। আর ফরাসি বিপ্লব থেকে আফ্রিকার স্বাধীনতা পর্যন্ত সবকিছুর মতোই, ছাত্রদের মনের কোণে জায়গা করেছিল ক্ষোভ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আর বাক-স্বাধীনতার কাহিনী। পার্থক্য, এখানে তারা ড্রাম বাজিয়ে যুদ্ধ করল না; তারা বুক পেতে দিল গুলির সামনে। শুধু ফ্রান্সের দেয়ালে গ্রাফিতির শব্দ ছিল “বিদ্রোহ,” আর এখানে স্লোগান: “মৃত্যু নয়, মুক্তি চাই।”

সাবেক শাসক গোষ্ঠী যেমন যুদ্ধের সময় বন্দুক, আর নাৎসিদের হাতে সলুক নামক ‘শিক্ষা সংস্কারের’ অজুহাত ছিল, ঠিক তেমনি এই দেশের ছাত্রদের মাথায়ও জেগেছিল সেই আগুনের শিখা। পার্থক্য শুধু এই, আমাদের এখানে ‘দাও-পেটা’ আর ‘দাও-অপেক্ষা’। আবারও ঝাঁক বেঁধে নামল তারা—এবার নতুন ছন্দে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের দেয়াল থেকে রংপুরের চায়ের দোকান পর্যন্ত সবখানে শুধু একটি স্বপ্ন: মুক্তি, সমতা।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রাস্তা দখলে নিল, লিফলেট দিল, মাইকে ডাকল “আয় মিছিল আয়,” আর তাদের পায়ের তলায় শহীদ মিনারের সাদা-কালো ছবি। তাদের ইটের টুকরো, ব্যানার, গলায় ঝুলানো ফ্ল্যাগ যেন নতুন বিপ্লবের গান গাইল। সেই গান যার শব্দে কাঁপলো ১০ বছর ধরে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকা সরকারের স্বপ্ন।

 

এবার তো ইতিহাসের পাতা আরও ঘুরে দেখুন, যদি একবার দেখতে পান, জোহানেসবার্গে যে হেক্টর পিটারসন ফ্যাসিবাদের বুকে প্রথম বুক পেতে দিয়েছিল, এইবার রংপুরে সেই গল্পের মতো দাঁড়িয়ে ছিল আমাদের আবু সাঈদ। গুলি খেয়ে ঠিকই দাঁড়িয়ে থাকল, ইতিহাসের পাতা আবার লিখল, “শহীদ সাঈদ।” এইবারও স্বৈরশাসক জানে, তারা হেরে গেছে।

 

তাহলে ৫ই আগস্ট ঠিক কী ঘটেছিল? খুব সহজ, এইবারও মনে হল স্বাধীনতার শপথ, আমাদের ভবিষ্যৎকে আরও একবার পুনর্লিখিত করলো, আর ছাত্ররা জানিয়ে দিল, “যাই হোক, আমরা লড়বো!” ফ্যাসিস্ট, খুনি, লুটেরা—সব নামই তাদের ছিল, কিন্তু ইতিহাস তাদের পাতা লেখার অনুমতি দেয়নি। পরাজয়ের এপিক লিখেছে আমাদের ছাত্ররা, তাদের কাছে ‘ইতিহাসের গার্ডিয়ান’।

 

যে দৃশ্য আমরা দেখেছি ‘রক্তাক্ত জুলাই’-তে, তাতে মনে হয়, এই সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য যতটা শক্তি প্রয়োগ করুক না কেন, তাকে একদিন শেষ হতে হবে। যেমন ফ্রান্সের ১৯৬৮ সালের ছাত্র আন্দোলনে যখন শ্রমিক ও ছাত্ররা একত্র হয়েছিল, তখন সরকার হঠাৎ বুঝতে পেরেছিল তারা আর ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে না। আমাদেরও এই আন্দোলন তা প্রমাণ করে দেয়, যখন ছাত্ররা বলে—আমরা চুপ থাকব না।

 

আর, বাদের তো রমরমা বাজার! মুজিববাদ থেকে শুরু করে জিয়াবাদ, মার্ক্সবাদ, মাও সে তুংবাদ, মওদুদিবাদ, আর তার সাথে মিলাদীবাদও যোগ দিয়েছে! মনে হচ্ছে যেন পাড়ার দোকানে নিত্যনতুন ব্র্যান্ডের চায়ের মতো বাদের লাইন সাজানো—চেষ্টা করলেই সব পাবেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এত বাদের ঠেলা কী আর কতদিন চলবে? সময় এসেছে এই ‘বাদ-বাদামি’ ঝুড়ি একবার ভালো করে ঝেড়ে ফেলার।

 

মুজিববাদ-জিয়াবাদ তো চলছে যেন এক আজব খেলা। একবার মুজিববাদ জিতলে জিয়াবাদ হার, আর পরেরবার ঠিক তার উল্টো! আর জনগণ? তারা সেই খেলার মাঠে বলের মতো গড়িয়ে যায়, কখনো ডানদিকে, কখনো বামদিকে। মাও সে তুং আর মার্ক্সবাদিরা তো সেই খেলার ড্রেসিং রুমে বসে বিয়ার খায় আর আড্ডা দেয়, যেন দেশটা তাদের চাইনিজ পিকল কারখানা। আর এদিকে মিলাদীবাদ তো একেবারে সাধু সন্ন্যাসীর মতো সবার ওপরে। মওদুদিবাদ কেতাবি ধোপদুরস্ত হয়ে হুজুরদের পেছনে দৌড়াচ্ছে।

 

এইসব বাদের মূল সমস্যা একটাই—সবাই নিজেরটাই ঠিক আর বাকিদেরটা ভুল ভাবে। আর সেই ভুল ভাঙানোর দায়িত্ব নিয়েছে ব্যান্ডওয়াগন বাদ-মাস্টাররা। একটু ভাবুন, সব বাদের ব্যান্ড চলে কি আর বেশি দিন? যা কিছুতেই লাভ নেই, তাতেই সবাই মত্ত। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সব বাদই নিজেদের খেলা খেলে। তাই, সময় এসেছে এদের নিপাত করা।

 

তাই আসুন, এবার সব বাদের একটা সম্মিলিত ঝাড়াই করি। সময়ের দাবি এখন নতুন বাদের নয়, বরং সব বাদের শেষ দেখার। গোঁড়ামি বাদ, জ্ঞান ছাড়া বাদ, রঙিন রাজনীতির বাদ—সবই শেষ হোক। আমাদের দরকার মানুষের মুক্তি, আর তা বাদমুক্ত হয়ে বাঁচার নামেই হবে। সব বাদের নিপাত যাক, এবার বাদের বস্তা উপুড় করে ফেলে দাও!

 

প্রথমে বলি, লোকজন যতই বলুক, আসলে সবাই নিজেদের মতবাদ নিয়ে এমনভাবে ঝগড়া করে, যেন অন্যরা কী ভাবে সেটা কেয়ারই করে না। তাই বলছি, বোধের বাঁধে পিকেটিং করো। চোখে চোখ রেখে এমন এক স্লোগান ছুড়ে দাও, যেন সেসব বাদবাদির গোঁড়ামি ঘুচে যায়। কারণ এখানে যা চলছে তা তো পুরো ফালতু; একদল চুপচাপ মানে আরেকদল হিন্দি সিনেমার ভিলেনের মতো চোখ রাঙায়।

 

তোমাদের বলছি, প্রয়োজন হলে রঙ বেরঙের কাগজে ইশ্বর বেচে ফেলো। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছো। দোকানে ঢুকে মুরগি যেমন কেজি দরে বিক্রি হয়, তেমনই ইশ্বরও কাগজে মুড়ে বিক্রি করো। এ তো আর নতুন কিছু না; হাজার বছর ধরে মানুষ তো তা-ই করছে, হালাল হলে কী, হারাম হলে কী? তবে এবার সেটাও ঢোল পিটিয়ে করো, একেবারে আদিখ্যেতা ছেড়ে!

 

কিন্তু বাদবাদির কথা বললে একটু হাই-ফাই হওয়া জরুরি। যতই তারা ‘হাই থট’ ভাবুক, আসলে তারা তো মনের টঙে বসে বাদাম ছাড়ানো ছাড়া কিছুই না। ওদের দাসত্ব করতে করতে তো সমাজের মাথায় ছিট বসে গেছে। ছিঁড়ো সব বাদের জাল, বুকে সাহস নিয়ে একবার স্বপ্ন দেখো, কী হয়, সবাই তো দাসত্বেই আটকে আছে—সেটাও দাসত্বের একরকম।

 

শেষে বলি, বাদবাদি বেচারা গুলোকে একটু মাফ করে দাও। এরা আসলে চিরকালের ভূতুড়ে ভক্ত—একবার ধরলে ছাড়ে না। কিন্তু তোমরা রাস্তায় নেমে তাদের বলে দাও, “গুরু মশাই, এবার একটু ট্যাবলেট খাও, পেটের জ্বালার থেকে মুক্তি পাবে!” তবে আবার আসল জালটা ভুলে যাবে না; যেদিন এই ফাঁদ ছিঁড়ে বেরোতে পারবে, সেদিন দেখবে আসলে সব একেবারে মিথ্যে।

 

আমাদের দেশে এই রক্তক্ষয়ী সংঘাত কেবল একটি আন্দোলনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটি তৈরি করবে একটি নতুন সমাজের ভিত্তি, যেখানে বৈষম্য, অত্যাচার ও শোষণের জন্য কোনো জায়গা থাকবে না। একসময় রাস্তায় নেমে আসা তরুণেরা, যারা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, তারা এক নতুন সমাজের সূচনা করবে। ইতিহাসে তারা লড়াই করেছে মাতৃভূমির সম্মান ও মুক্তির জন্য, আর আজো করছে দমনকারী শক্তির বিরুদ্ধে। তাদের সংগ্রাম একদিন প্রতিটি নিষ্পেষিত মানুষের আশা হয়ে উঠবে।

আরেকটা ব্যাপার, ভয়ংকর খুব, যার নাম দাসত্ব। এটা আমাদের জীবনকে এমনভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে যে আমরা আর মুক্তির স্বাদ বুঝতেই পারি না। এই দাসত্ব আমাদের রক্তে মিশে গেছে, যেন বংশপরম্পরায় জেনেটিক কোডের মতো। আমাদের মনোজগৎ, আচরণ, এমনকি চিন্তাধারা পর্যন্ত এই দাসত্বের গণ্ডিতে বন্দী। কোনো এক দূর অতীত থেকে চলে আসা এই পরাধীনতার শৃঙ্খল এতটাই শক্ত যে, তা ভাঙতে গেলে রুহ কবজের মতো যন্ত্রণায় কুঁকড়ে উঠি। আত্মা মুক্তি চায়, কিন্তু সেই মুক্তি এত সহজে আসে না। কষ্ট হয়, যন্ত্রণা হয়, কিন্তু অভ্যাসবশত দাসত্বের পথ থেকে সরতে পারি না। এ যেন নিজের গলায় বাঁধা এক অদৃশ্য শিকল—যা কোনো মন্ত্র কিংবা তাবিজে খোলা যায় না।

 

কপালে সুজুদের দাগ, গলায় মুক্তির তাবিজ—এসবের আড়ালে লুকানো থাকে আমাদের দাসত্বের চিহ্ন। আমরা ভাবি, প্রার্থনা আর আশীর্বাদ আমাদের মুক্তির পথ খুলে দেবে। কিন্তু আসলে তা স্রেফ এক স্বস্তির বুদ্বুদ, যা বাস্তবতার কঠিন মাটিতে কখনো স্থায়ী হয় না। এই জাগতিক প্রার্থনার আড়ালে চাপা পড়ে থাকে আমাদের বিদ্রোহের ইচ্ছা, যা শৃঙ্খলিত হয়ে পড়ে ঐ সামাজিক নিয়মের বেড়াজালে। আমাদের আত্মা মুক্তি চায়, কিন্তু সমাজ, ধর্ম, রাষ্ট্র এসব এক এক করে আমাদের বিদ্রোহী সত্তাকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলে।

 

মুক্তি কি আদৌ সম্ভব? হ্যাঁ, সম্ভব, তবে তা কেবলমাত্র বিদ্রোহের মাধ্যমে। বিদ্রোহ ছাড়া কোনো সমাজ, কোনো জাতি, কোনো ব্যক্তি আসল অর্থে মুক্তি পায়নি, পাবে না। বিদ্রোহ মানেই শুধু অস্ত্র তুলে নেওয়া নয়, বরং বিদ্রোহ মানে সাহসী হয়ে দাঁড়ানো, নিজেদের মধ্যে বিদ্যমান অন্যায় আর অসঙ্গতির বিরুদ্ধে সরব হওয়া। গলায় যে মুক্তির তাবিজ ঝুলছে, তার মন্ত্রগুলো কেবল তখনই বাস্তব রূপ নেবে, যখন আমরা এই দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে ফেলতে পারব। সুজুদের দাগ হয়তো আমাদের ইমানের পরিচয়, কিন্তু তার বাইরে যে মুক্তির দাগ, সেটাও চাই।

 

আত্মার জন্য দরকার দাওয়াত। শুধু ধর্মীয় দাওয়াত নয়, বরং মানসিক দাওয়াত, যা আমাদের অন্তরের বিদ্রোহী সত্তাকে জাগিয়ে তুলবে। দাসত্বতা আমাদের সভ্যতার শরীরে ঢুকে গেছে বলেই, তা থেকে বের হওয়া সহজ নয়। প্রতিদিনের ছোট ছোট বিদ্রোহই আমাদের সেই বড় বিদ্রোহের জন্য প্রস্তুত করে তোলে, যা মুক্তির পথ দেখাবে। বিদ্রোহের ইতিহাস কখনো শান্তিপূর্ণ নয়, সেটা বেদনার, রক্তপাতের, কিন্তু তার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে মুক্তির বীজ।

 

এই বিদ্রোহ হবে ইতিহাসের স্রোত। দ্রোহকাল আসবে, তখন সবাই বুঝবে, আমাদের সভ্যতা আসলে এই শৃঙ্খলিত দাসত্ব নয়। ইতিহাসে যেভাবে বিদ্রোহীরা সমাজের কাঠামো ভেঙে নতুন কিছু গড়েছে, আমাদেরও তেমনই বিদ্রোহ করতে হবে। হোক তা ছোট্ট বিদ্রোহ, কিংবা বিশাল এক বিপ্লব, সবই দরকার। আমাদের মুক্তির জন্য, আমাদের সভ্যতার নতুন পথের জন্য। এই দ্রোহকালই হবে আমাদের নতুন ইতিহাসের পথচিহ্ন, যেখানে আর কোনো দাসত্ব থাকবে না, থাকবে শুধু মুক্তির গান।

 

সবশেষে, একটাই কথা, বিদ্রোহ যদি প্রতিরোধের ভাষা হয়, তবে ছাত্র আন্দোলন বোধহয় সে ভাষার কবিতা। কেউ এই কবিতা ভুলতে পারবে না, কারণ এ এক রক্তাক্ত রোমান্স, আর এতে ঝরা রক্তগুলো যেমন স্মৃতির ভাঁজে, তেমন ভবিষ্যতের সড়কেও।

লেখক: সাজিদ সামী চৌধুরী, নির্বাহী সম্পাদক, জনপদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *