ড. ইউনুস – অ্যা ক্রিটিক্যাল স্টাডি – আইমান সিদ্দিক
যদি বলি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম একজন কিংবদন্তি; তাহলে আমার সাথে দ্বিমত পোষণ করা লোকের সংখ্যা হবে অসংখ্য। তাহলে চলুন আজকে একজন বিতর্কিত কিংবদন্তীর গল্প শুনি।
ড. মোহাম্মদ ইউনুস তার যৌবনকাল পর্যন্ত গল্পগুলো মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেগুলো থেকে অনেক বেশি ভিন্ন নয়। একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ীর ছেলে প্রথমে লামা বাজার প্রাইমারী স্কুল ও পরে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা করে। পড়াশোনার পাশাপাশি বাকি দশজন ছেলের মত তিনিও স্কাউট সদস্য ছিলেন। গ্রাম থেকে শহরে আসা একটা কিশোর; যার মা বেশ সময় ধরে মানসিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন, তিনিও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সমগ্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৬ তম মেঝাক্রম অর্জন করে মেট্রিক পাশ করেন যারা মনে করেন, আর্টস বা কমার্স ক্লাসের শেষের দিকের ছাত্রদের পড়ার বিষয়, তাদের জেনে রাখা উচিৎ, ছাত্র হিসেবে প্রচন্ড মেধাবী ইউনুস তাঁর পড়ালেখা শেষ করেছেন আর্টস এর বিষয়ে। গল্পে ফিরে আসি, মেধাবী ছাত্র ইউনুস স্কাউটের বদৌলতে ছাত্রজীবনেই ঘুরে আসে পাকিস্তান, ইন্ডিয়া এবং কানাডা। আবার, কলেজ জীবনে ইউনুস মঞ্চ অভিনয়ে বেশ সুনাম কামিয়েছে। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়” থেকে ‘অর্থনীতি’ তে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন। ছাত্র ইউনুসের গল্প এখানে শেষ এবং একইসাথে ব্যক্তি ইউনুসের সফল যাত্রা ঠিক এখান থেকে শুরু।
একদিকে পড়ালেখা শেষ করে ইকনোমিক্স রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছেন, অন্যদিকে পি. এইচ. ডি’র খরচের জন্য মেধাবৃত্তি খোঁজ করছেন। দীর্ঘ চার বছর পর তাঁর স্বপ্ন পূরন হলো। মেধাবৃত্তি পেয়ে পি. এইচ. ডি রিসার্চের জন্য আমেরিকায় পাড়ি জমালো। পাড়ি জমানোর আগে নিজ উদ্দ্যোগে তৈরি করেন “প্যাকেটজাতকরণ ফ্যাক্টরি”। ষাটের দশকে নিজের উদ্যোক্তা হবার গল্প রচনা করতে শুরু করেন পঁচিশ বছর বয়সী অর্থনীতিবিদ।
আমেরিকায় পি.এইচ. ডি অর্জন করতেই সেখানের “মিডল টেনেস স্টেট ইউনিভার্সিটি” তে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। একই সময়ে দেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রে বসেই আন্তর্জাতিক পত্রিকা সমূহে দেশের করুণ অবস্থার চর্চা শুরু করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের জন্য সহায়তা গ্রহন করতে শুরু করেন। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে দেশ বিজয়লাভ করে৷ পৃথিবীর মানচিত্রে স্থাপিত হয় বাংলাদেশের চিত্র।
যুদ্ধ শেষ, এইদিকে ইউনুসেরও যথেষ্ট গবেষণা শেষ। এবার দেশে ফিরে ধারনাগুলোকে বাস্তবায়ন কিরার পালা। নতুন বিবাহিত রাশিয়ান স্ত্রী ফরোসটেলকো কে নিয়ে স্বদেশে ফিরে আসলেন। দেশে এসেই সরাসরি সরকারের পরিকল্পনা পরিষদে তাঁর জায়গা মিললেও তিনি এই কাজ প্রত্যাখ্যান করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি’র বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হোন।
কয়েক বছরে তিনি উপলব্ধি করলেন, সদ্য জন্ম নেওয়া এই দেশে অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনতে গেলে কোটি টাকার হিসেব মিলানো যাবেনা। এইখানে তত টাকার হিসেব বুঝতে হবে,যত টাকা দেশের মানুষগুলো হাতে কলমে গুন-ভাগ করতে পারে। ১৯৭৪ সালে তৎকালীন সরকারের ‘দারিদ্র্য নির্মূল’ পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েই ছোট ছোট পর্যায়ে অর্থনৈতিক বিনিয়োগ পরীক্ষা করতে শুরু করেন। গ্রামের মেয়েদের ২০০০-২৫০০ টাকা বিনিয়োগ করে একমাসে প্রায় ২১ টাকা মুনাফালাভ করেন। যা তার বিনিয়োগে বাৎসরিক ১২% মুনাফা দিতে সক্ষম। বিশ্ব অর্থনীতিকে অনুসরণ করে দেশে যখন বৃহৎ অর্থনৈতিক কার্যক্রম চলছিলো, ব্যাংকে লক্ষ টাকার ঋণের ব্যবিসা চলছিল; তিনি উপলব্ধি করলেন, উউন্নয়নশীল এই দেশে অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনতে হলে ক্ষুদ্র -অর্থনীতি তথা ‘মাইক্রোইকোনোমিক্স’ প্রণয়ন করতে হবে। তিনি দেখছেন, তাঁর গ্রামের মেয়েরা বাঁশ কেটে যে মোড়া বানানোর শিল্প জানেন, সেটাকে ব্যবসায় রূপান্তর করতে পারলে গ্রামের নারীগুলো হয়ে উঠবে উদ্যোক্তা এবং ঘরের নারীদের কাজগুলো হয়ে যাবে শিল্প।
কিন্তু ব্যাংক নারীদের উদ্যোক্তা হবার জন্য শত বা হাজার টাকার ক্ষুদ্র ঋণ দেয়না। তিনি করলেন কি, নিজ ব্যাংক থেকে লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে সেগুলো গ্রামের নারী- পুরুষদের ব্যবিসায় খাটালেন। ১৯৭৬ সালের কথা বলছি। ঠিক এখান থেকেই ইউনুসের বাংলাদেশের ক্ষুদ্র- অর্থনীতিতে পদচারণা ও পুরো এশিয়ার অন্যতম ক্ষুদ্র- অর্থনৈতিক প্রবক্তা হবার গল্প শুরু।
১৯৭৬ সালে যাত্রা শুরু করে ৫ বছরের মধ্যে তাঁর কাছ থেকে ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা হয় ২৮,০০০। অকল্পনীয় সাড়া পেয়ে তিনি বুঝলেন, এইভাবে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে মধ্যম পন্থা না সেজে বরং নিজেই যদি স্ব- অর্থায়নে ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করেন, তাহলে ব্যাংকে বাড়তি সুদ দেওয়ার কোনো মাথাব্যথা নেই। সেই চিন্তা থেকেই ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠা করলেন “গ্রামীণ ব্যাংক” যা উনার দায়িত্বে থাকাকালীন সময় পর্যন্ত ৭৪ লক্ষ বাংলাদেশী নারী-পুরুষদের ঋণ দিয়ে সহায়তা করেছেন।
১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গ্রামের মানুষদের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করেন। গ্রামের পুকুরগুলোতে মাছ চাষ হতে থাকে, তিনি এর নাম দেন ‘গ্রামীণ মৎস্য প্রকল্প’। কৃষকদের নিয়ে চাষাবাদের উদ্যোগ নেন এবং নাম দেন ‘গ্রামীণ কৃষি প্রকল্প’। এই প্রকল্প গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় উদ্যোগ ছিলো ‘গ্রামীণ- টেলিকম’ প্রতিষ্ঠা, যা এখনো গ্রামীনফোন কোম্পানীর ৩৫ শতাংশ মালিক। গ্রামীণ টেলিকম বাংলাদেশের সাইবারনেট ও সফটওয়্যার কি পরিমাণ গতি দিয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ এরপর এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৫০,০০০ গ্রামে বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে প্রায় দুই লক্ষ ষাট হাজার মানুষের হাতে মোবাইল ফোল তুলে দিয়েছেন।
১৯৯৭ সালে ইউনুস দেশে গ্রামীণফোন সেবা নিয়ে না আসলে আমরা আদৌ এত উন্নতি সাধন করতে পারতাম তো? আচ্ছা এই বিচার পরে হবে।
তিনি তার কর্মধারার মাধ্যমে বন্ধুত্ব তৈরী করেন তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এর সাথে, যিনি বছরের পর বছর বিশ্ব মঞ্চকে আকুতি করেছেন, যেনো ইউনুসকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। বিভিন্ন সত্তায় দাঁড়িয়ে বলেছেন, ইউনুসকে নব্বই শতকেই নোবেক দেওয়া উচিত ছিলো (তিনি নোবেল পুরষ্কার পাবার অনেক আগে বলেছেন।)
এবার আসি এই বহুল আলোচিত/ সমালোচিত ব্যক্তির অর্জনে। বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র নোবেল বিজয়ী হিসেবে সমাদৃত হলেও তিনি বিশ্বমঞ্চে তার কর্মকাণ্ডের খেতাব অর্জন করতে শুরু করেছিলেন ১৯৮৪ সাল থেকেই। সব অর্জনের কথা লিখব না। দশ শতাংশও লিখব না। শুধু যে অর্জনগুলো না লিখলে হয় না, সেগুলো লিখি। ইউনুস বিশ্বের সাতজন মানুষের একজন, যারা একত্রে নোবেল পুরষ্কার, কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল এবং প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। “ফরচুন ম্যাগাজিন” বিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীর ১২ তম অন্যতম কিংবদন্তী উদ্যোক্তার একজন হিসেবে বিশ্বমঞ্চে তাকে পরিচিত করেছেন। এছাড়া অর্ধশতাধিক আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডক্টরেট উপাধিতে ভূষিত করেছেন। জাতিসংঘ বারবার ক্ষুদ্রার্থয়নে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার উপায় জানিতে ইউনুসকে স্থান দিয়েছেন উপদেষ্টামন্ডলীতে। বিল ক্লিনটন, ওবামা, বুশ; যারা বিশ্বরাজনীতির অন্যতম নেতা, তারা বারবার ইউনুসকে স্বীকৃতি দিয়েছেন বিভিন্ন উপাধির মাধ্যমে। সর্বশেষ অলম্পিক কমিটি বিশ্বের তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে ইউনুসকে ভূষিত করেছেন “অলিম্পিক লরেল” খেতাবে। ৭০০ কোটি মানুষের মধ্যে অলম্পিকের মত বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াঙ্গন ইউনুসকে বেছে নিয়েছেন, আসলেই কি কোনো কৃতিত্ব ছাড়াই এই অর্জন? যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস শহর ১৪ই জানুয়ারী কে “ইউনুস ডে” হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রশ্ন হলো, আন্তর্জাতিক চর্চায় এত সম্মাননীয় ও প্রশংসিত এই কিংবদন্তীকে নিয়ে দেশে কোনো চর্চা হয়না কেনো? কিংবা কি কারনে তিনি দেশের মানুষের কাছে সমালোচিত? ব্যাপার টা রাজনৈতিক। রাজনৈতিক আলাপ আমি বরাবরের মতো উপেক্ষা করে যাচ্ছি।
এবার চেষ্টা করবো উনাকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নগুলো করা হয়, সেগুলোর উত্তর দিতে।
গ্রামের মানুষদের হাঁস, মুরগী ধরে নিয়ে যেতেন।
– উনি সমাজসেবী ছিলেন না। তিনি ছিলেন উদ্যোক্তা। বিশ্বের যেকোনো ব্যাংকিং এর নিয়ম হলো ঋণের বিনিময়ে সুদগ্রহণ এবং ঋণ আদায় করতে না পারলে উপায় অবলম্বন। স্বয়ং বাংলাদেশ ব্যাংকও অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সুদগ্রহণ করে এবং আদায় করতে অপারগ হলে সম্পত্তি হরণ করে। মজার তথ্য হল দেশের প্রতি বিশজন মানুষের মধ্যে একজন, অর্থাৎ প্রায় ৭৪ লক্ষ মানুষ গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করেছেন। কোনো তারা গ্রহণ করেছেন? কেনো উনাকে সরিয়ে সরকার দ্বারা গ্রামীণ ব্যাংকের সকল কার্যক্রম এখনো চলমান? কেনো উনাকে অনুসরণ করেই দেশে প্রতিষ্ঠিত সহস্র এনজিও এবং ইন্স্যুরেন্সের মধ্যমে ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করা হয় এবং সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তির মাধ্যমে আদায় করা হয়?
উনি সুদের প্রবক্তা।
– বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সুদের নিয়ম বা ব্যাংকিং প্রকল্প শত বছরের পুরোনো হিসেব। উনি শুধু ব্যাংকিং এর বৃহৎ অর্থায়নকে ক্ষুদ্রার্থয়নে রূপ দিয়েছেন।যার সুফল দেশের মানুষ এখনো ভোগ করেছেন।
দেশে উনার অবদান কি?
– ক্ষুদ্র- অর্থায়নে বিপ্লব না ঘটলে দেশের উন্নতি এতই দ্রুত হতো? দেশের অজস্র যুবক একটা স্টার্টআপ পরিকল্পনা নিয়ে ২০ হাজার টাকা ঋণের জন্য দৌড়ায়। ম্যাক্রো- ইকোনোমিক্স এর জন্য কোনো সমাধান ছিলো?
অথবা ধরুন, দেশের প্রথম টেলিকম সেবা গ্রামীণফোন এর স্টার্টআপ যদি নিয়ে না আসতেন বা দেশের টেলিকম সেবা আরো অন্তত দুই বছর পর দেশে আসতো, ভাবতে পারছেন দেশ কতটা পিছিয়ে যেতো?
কিংবা গ্রামীণ টেলিকমের উদ্দ্যোগ গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আজই লক্ষ মোবাইল ফোন যেন পৌছিয়ে না দিলে, আদৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা এত উন্নত হতো কিনা চিন্তার বিষয়।
তাছাড়া, বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে সম্মানের সাথে পরিচিত করেছেন, সেটা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না।
উনি এত বড় মানুষ হয়ে কি লাভ, দেশের জন্য এখন কি করছেন?
– উনাকে কিছু করার সুযোগ কি দিয়েছি আমরা? উনি চেয়েছিলেন উনার গ্রামে একটা চক্ষু হাসপাতাল করবেন, আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় করবেন, যার নাম দিয়েছিলেন “ইউনুস বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়”।
আর আমরা কি করেছি? উনাত প্রতিষ্ঠিত ‘গ্রামীণ ব্যাংক’ থেকে উনাকেই বের করে দিলেন। শুধু বের ই করলেন না, উনার এক কর্মচারীকে উনার দায়িত্বে বসিয়ে দিলেন। কনফারেন্সে জনসম্মুখে একজন মন্ত্রী বললেন, ” ইউনুস সাহেব গ্রামীণ ব্যাংক থেকে দূরে থাকলে ভালো হয়।” উনি নিজের পদ ফিরে পেতে যখন হাইকোর্টে পিটিশন করলেন, উনার বয়স বেশি এটাকেই কারণ দেখিয়ে উনাকে উনার সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো। এক প্রকার জোড় করেই দেশ থেকে বিতাড়িত করা হলো, কারণ সংবিধান এর লেখক ড.কামাল হোসেন, মাহফুজ আনাম, রহমান সোবহানের মতো দেশের বিভিন্ন বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে তিনি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।
এত অত্যাচার করে, অপমান করে যাকে দেশ থেকে আমরা তাড়িয়ে দিয়েছি, তার থেকে কি আশা করতে পারি? যুক্তরাষ্ট্রে তিনি বেশ সময় ধরে ছিলেন। এতই গুনী না হলে, দক্ষিন এশিয়ার ছোট একটা দেশের একটা লোকের জন্য এত মরিয়া হয়ে ছিলেন কোনো তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী বিল ক্লিনটন? কেনো এত সম্মান দেখিয়েছেন বারাক ওবামা? তিনি প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াতে ভুলেন নি যেনো। হিলরী ক্লিনটন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজনে তিনি সবসময় পাশে ছিলেন। রাজনৈতিক কথা না লিখার অনেক চেষ্টা করেছিলাম। অল্প লিখতে হল।
তবু ইউনুস দেশের জন্য কিছু করছেন না আর এটাও বলা যায়নাম বিশ্বমঞ্চে যখন তিনি পুরষ্কৃত হন, তখন বারবার দেশের নামটা উঠে আসে। বিশ্বের যেকোনো দেশ যাকে নাগরিকত্ব দেওয়ার সৌভাগ্য মনে করবে, সেই লোকের জাতীয়তা শুধু বাংলাদেশীই। গুগল প্লাসে সবচেয়ে বেশি যে লোকটাকে অনুসরণ করা হয়; যখন তারা দেখে, এই লোক বাংলাদেশে থেকে এত কিছু করেছেন; হয়তো অবশ্যই ভাবেন, বাংলাদেশ বুঝি কিংবদন্তী তৈরীর কারখানা!
ইউনুস সরাসরি দেশের জন্য কিছু করে কি না সেই তর্ক করছি না। তবে দেশের ইমার্জেন্সি সহায়তায় গ্রামীণফোনকে দৌড়ে যেতে দেখি, যার ৩৫% মালিকানা তারই গ্রামীণ টেলিকমের। আরো আলোচনা আছে, লিখতে গেকে উপন্যাস হয়ে যাবে। শেষ একটা প্রশ্ন করি। পৃথিবীতে ৭০০ কোটি মানুষের বসবাস যার মধ্যে অন্তত এক লক্ষ মানুষ আন্তর্জাতিক বুদ্ধিজীবী হবেই। এতই মানুষের অভাব ছিলো যে ইতিহাসের তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে ইউনুসকে অলম্পিক লরেল খেতাবে ভূষিত করতে হয়েছে? নোবেল, ফোরবস বা ফরচুন ম্যাগাজিনসহ বিশ্বের প্রত্যেকটা উচ্চ আসনে তাকে নিয়ে চর্চা করতে হয়েছে? বিশ্বের সবচেয়ে দামী বিশ্ববিদ্যালয়, ফুটবল ক্লাব বা আন্তর্জাতিক সম্মেলন উনার দুটো কথা শুনতে মুখিয়ে থাকে? প্রভাবশালী বৈশ্বিক চিন্তাবিদ অথবা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মাইক্রোইকোনোমিস্টদের তালিকায় সউচ্চ স্থানে থাকে? বা মাইক্রোক্রেডিট নিয়ে গবেষণা করলেই শুধু ইউনুস নামটাই উঠে আসে?
।